ভারতের ৭৮ তম স্বাধীনতা দিবসের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য

আজ ১৫ ই আগস্ট,আর ১৫ই আগষ্ট মানে এমন একটা দিন যেদিন ভারতবর্ষের সব ধর্মের যেকোনো বর্ণের ,যেকোনো জাতির প্রতিটা মানুষ আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন,মেতে ওঠেন উদযাপনে। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা দিবস কারণ এই দিনটা আজ থেকে প্রায় ৭৭ বছর আগে আজকের দিনেই ভারতবর্ষ মুক্তি পেয়েছিলো ১৯০ বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে।  সেই শৃঙ্খল ভারতবাসীর কাছে ছিলো দুঃস্বপ্নের মতো। যে পরাধীনতার অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিলো ভারতের প্রতিটা মানুষের ভবিষ্যত । আজকের দিনে ভারতবর্ষের প্রতিটা পাড়ায়-পাড়ায় স্কুল-কলেজে, অফিস আদালতে গৌরবের সাথে উত্তোলিত হয় ত্রিবর্ণ রঞ্জিত ভারতের জাতীয় পতাকা আর এরই সাথে যখন বেজে ওঠে সারে জাহাসে আচ্ছা অ্যা হিন্দোস্তা হামারা। তখন প্রত্যেকটা ভারতবাসীর গা যেনো শিহরিত হয়ে ওঠে। তখন আমাদের মনে পড়ে যায় সেই শত সহস্র বীর বিপ্লবীদের আত্মত্যাগের করুণ কাহিনীগুলো । যারা আমাদেরকে স্বাধীনতা এনে দেওয়ার জন্য দিয়েছেন নিজেদের তরতাজা প্রাণের বলিদান । আজকের দিনটি উদযাপনের মধ্য দিয়ে আমরা যেমন আমাদের স্বাধীনতার আনন্দ উপভোগ করি, ঠিক তেমনি ভাবেই আমরা স্মরণ করি সেই সব মহাপুরুষদের যাদের জন্য আজ আমরা খোলা আকাশে মুক্তির আনন্দ উপভোগ করতে পারছি। আমরা স্মরণ মনন করি সেই বীর বিপ্লবীদের যেনো আমাদের পরবর্তী প্রজন্মরাও ভুলে না যায় সেই আত্মত্যাগের বীর-গাথা গুলো। 
 প্রাচীন কাল থেকেই ভারতবর্ষ ছিলো বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী দেশ গুলোর মধ্যে সেরার সেরা। সেদিনই ভারতবর্ষের স্বাধীনতার সূর্য অস্তগামী হয়েছিলো যেদিন ভারতবর্ষে ব্যবসা করতে আসা ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত ধরে পলাশীর প্রান্তরে বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় ঘটেছিলএবং সূচনা হয়েছিলো পরাধীনতার যুগের । ১৭৬৪ সালেও বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের পর ইংরেজদের আধিপত্য তীব্র গতিতে বৃদ্ধি পেতে পেতে সারা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে ভারতবর্ষে ব্যবসা করতে আসা এই কোম্পানিটি ভারত শাসন করতে আরম্ভ করে।বণিকের মানদণ্ড পরিণত হয়ে যায় রাজদণ্ডে। আর এই শাসনের ভিত্তি ছিল অতি ভয়ঙ্কর,এই শাসনের ভিত্তি ছিল অত্যাচার,শোষণ আর নিপীড়ন প্রতিটি ভারতবাসীর সর্বস্তরের স্বাধীনতাকে সম্পূর্ণভাবে কেড়ে নেওয়া হয় । চাষীদের তাদের ফসল ফলানোর অধিকার টুকুও ছিল না প্রতিটি মানুষকে বাধ্য করানো হয় ইংরেজদের গোলামী করার জন্য । মা বোনেদেরও কোন সম্মান ছিল না।হাজার রকম করের মাধ্যমে লুট করে নেওয়া হতো মানুষের শেষ রক্তবিন্দুও। এই ইংরেজদের অত্যাচারের মূল ভিত্তিই ছিল শোষণ দমন এবং অকথ্য পীড়ন। সাধারণ মানুষের অত্যাচারের যেন কোন সীমাই ছিল না । ছিলনা জীবনের কোন ন্যূনতম অধিকারগুলোও কোটি শহীদের পূণ্যভূমি এ ভারতবর্ষের সন্তানেরা এই সবকিছু এত সহজে মেনে নেবে তেমনটাও অসম্ভব। কারণ এই দেশ বীর বিপ্লবীদের মাতৃভূমি । ইংরেজদের এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে বারবার গর্জে উঠেছিল শত সহস্র বীর বিপ্লবীরা ইংরেজদের কামান,গুলি ,বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেদের প্রাণের বলিদান দিয়ে প্রতিবাদ করে গেছেন অজস্র স্বাধীনতা সংগ্রামীরা। নারী-পুরুষ হিন্দু,মুসলিম পার্সি-জৈন প্রত্যেকটি ধর্মের প্রত্যেকটি বয়সের মানুষেরা গর্জে উঠেছিলো ব্রিটিশদের অত্যাচারের হাত থেকে আমাদের দেশকে রক্ষা করতে। মাস্টারদাসূর্যসেন , যতীন দাস, লাল-বাল-পালের মতো বীরেরা নিজেদের প্রাণ হেলায় উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন, ভারতমাতাকে স্বাধীন করার জন্যে। রাজগুরু , সুখবীর বিনয়-বাদল-দীনেশ সহ আরো কত সহস্র নাম এদের বলে শেষ করা যাবেনা। বছর আঠারোর ক্ষুদিরাম বসু হাসতে হাসতে ফাঁসির দড়ি গলায় পড়ে নিয়েছিলেন । অমর গাঁথা বলে শেষ করা যাবে না। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে মহাত্মা গান্ধী এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অবদান আলাদাভাবে না বললেই নয়। একদিকে জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে অহিংস পথে অসহযোগ,আইন অমান্য, ভারত ছাড়ো আন্দোলনের মতো বৃহত্তর আন্দোলনের তীব্রতা ইংরেজদের ভাবিয়ে তুলেছিল আর অন্যদিকে দামাল ছেলে সুভাষচন্দ্র বসুর সশস্ত্র স্বাধীনতার ডাকে নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল ব্রিটিশদের অহংকার। তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো | এই ডাক দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন আজাদ হিন্দ বাহিনী। বিদেশী সাহায্য নিয়ে এই বাহিনী ১৯৪৫ সালে ভারতের মণিপুরে তুলেছিলেন স্বাধীনতার পতাকা । ভারত মায়ের বীর বিক্রমী এইসব দামাল ছেলে মেয়েদের সাহসিকতার সামনে ব্রিটিশ শাসনের পতন ছিলো অবশ্যম্ভাবী । আর হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ তরতাজা প্রাণের বিনিময়ে আসে আমাদের এই কাঙ্খিত স্বাধীনতা । সালটা ১৯৪৭ , দিনটা ছিল ১৫ই আগষ্ট। দীর্ঘ ১৯০ বছরের যন্ত্রণার অবসান ঘটিয়ে আমাদের দেশ স্বাধীনতা লাভ করে। আর এরই সাথে সাথে অবিভক্ত ভারতের বুকে নেমে আসে সুতীব্র আঘাত। ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হয়ে যায় গৌরবান্বিত এই দেশ ।আলি জিন্নাহর নেতৃত্বে মুসলিম দেশ হিসেবে । পাকিস্তান নামে একটি দেশের । আর অন্যদিকে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে আমাদের দেশ ভারতবর্ষ । 
হাজারো বাধা বিপত্তি পেরিয়ে শত সহস্র প্রাণের বিনিময়ে ইংরেজদের কাছ থেকে স্বাধীনতা হয়তো আমরা পেয়েছি কিন্তু এটাই কি ছিলো আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা ?এখনো ধর্মের নামে ,জাতির নামে অস্পৃশ্যতা সাম্প্রদায়িকতার বেড়াজাল থেকে আমরা কি সম্পূর্ণ মুক্ত হতে পেরেছি ? আজও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে গৌরবের সাথে দাঁড়িয়ে আছে, সেখানে আজ নির্মাণের একমাসের মধ্যেই ১৩ টি সেতু ভেঙে পড়ে তাও একটা রাজ্যেই। এখানে আজ পাড়ার প্রত্যেকটা রাস্তাঘাট যেনো জানান দেয় দুর্নীতির স্বাধীনতাকে ।প্রত্যেকটা সরকারি দপ্তর যেনো জানান দেয় । কোরাপশনের সুগভীর অস্তিত্বকে। এসবের জন্যই কি হাজারো বীর বিপ্লবীরা নিজেদের প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন? আজ আমাদের যুব সমাজকে দায়িত্ব নিতে হবে। এসবকে নির্মূল করার দায়িত্ব নিতে হবে।আমাদেরকেই উপলব্ধি করতে সেই দেশপ্রেমের আগুনকে।এবং আমাদের সেই প্রজ্জ্বলিত অগ্নিশিখাকে ত্বরান্বিত করতে হবে। গৌরবান্বিত করতে হবে ভারতবর্ষের ভবিষ্যৎকে। চলুন বন্ধুরা সমস্ত বাধা বিপত্তির ঊর্ধ্বে উঠে,জাতি ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতার ঊর্ধ্বে উঠে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই আমরা আমাদের দেশকে বিশ্বসেরা বানাবোই ।

ধন্যবাদ ।

To show your Support and appreciation to the Script Writer send Smileys at himangshudasrock@okaxis 







Comments