ভারতের ৭৯ তম স্বাধীনতা দিবসের বক্তব্য ২০২৫ | Best Independence Day Speech in Bengali

স্বাধীনতা শব্দটা ছোট হলেও এর ওজন যেন পাহাড়ের মত। এটা কেবল একটা শব্দ নয়, এটা একটা অনুভূতি ,একটা ইতিহাস,অনেক বিপ্লবীদের ত্যাগের ফল। আজকের দিনে যখন আমাদের তিরঙ্গা পতাকা আকাশে ওড়ে তখন শুধু একটা কাপড় নয় ,ওরে লক্ষ প্রাণের আত্মবলিদানের গল্প। 
আজ ১৫ই আগস্ট,মহান ভারতবর্ষের স্বাধীনতা দিবস।সারা দেশ জুড়ে মহা আরম্ভের সাথে পালিত হচ্ছে ভারতের ৭৯ তম স্বাধীনতা দিবস ।৭৮ বছর আগে আজকের দিনে ভারত মাতার সন্তানরা পরাধীনতার শৃংখল ছিড়ে চিৎকার করে বলেছিল "আমরা স্বাধীন" । এটি সেই দিন যখন একটি জাতি মাথা উঁচু করে বলেছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্য নয় ,ভারতবাসী নিজের দেশ নিজেই চালাবে। আজ সেই দিন যেদিন ভারতের বীর সংগ্রামীরা রক্তের নদী বইয়ে আমাদের হাতে তুলে দিয়েছিল একটা নাম "স্বাধীন ভারত"। এই দিনে শুধুমাত্র একটি জাতির মুক্তি হয়নি, মুক্ত হয়েছিল ভারতের চিন্তাধারা, মুক্ত হয়েছিল আমাদের সংস্কৃতি, মুক্ত হয়েছিল আমাদের ভবিষ্যৎ। আজ সেই দিন যেদিন ভারত নামের স্বপ্নটা বাস্তবে রূপ নিয়েছিল। আজ সেই দিন যেদিন একটা জাতি শিখেছিল মাথা তুলে দাঁড়াতে, নিজের মাটিতে স্বাধীনভাবে বাঁচতে। আজকের দিন আমাদের মনে করিয়ে দেয় স্বাধীনতা আমাদের কেউ দয়া করে দেয়নি, রক্ত দিয়ে, প্রাণ দিয়ে, ত্যাগ দিয়ে আমরা স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিলাম। আজকের দিনটা আমাদের ক্যালেন্ডারের শুধু একটা সাধারন তারিখ নয়, এই দিনটি আমাদের গর্বের ইতিহাস, দেশ প্রেম আর আত্মত্যাগের সাক্ষ্য বহন করে । আজকের দিনটি শুধুমাত্র একটি জাতীয় উৎসব নয়, এটা আমাদের অস্তিত্বের উৎসব। এটি এমন এক মুহূর্ত যেখানে আমরা ফিরে তাকাযই অতীতের দিকে, স্মরণ করি সেই সব সাহসী বিপ্লবীদের যাদের রক্ত, ঘাম, দেশের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসার বিনিময়ে গড়ে উঠেছে আজকের ভারত। আর আজকের দিনে ইতিহাসের পাতা থেকে কিছু রক্তাক্ত স্মৃতি আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই ।

একদিন এমনও ছিল যখন সূর্য উঠলেও আলো ছড়াতো না আমাদের ঘরে, আমরা জাগতাম কিন্তু স্বাধীনতা ঘুমিয়ে থাকত। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধ ছিল ভারতবর্ষের স্বাধীনতা লুটের প্রথম পদধনী। এই যুদ্ধে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলা কে পরাজয়ের মাধ্যমে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সূচনা করে। আর এই পরাজয়ের মাধ্যমেই শুরু হয় এক দীর্ঘ দাসত্বের অধ্যায়। এরপর প্রায় দীর্ঘ 200 বছর ধরে ইংরেজদের নির্মম শোষণ, লুট আর নিপীড়ন ।তারা এসেছিল ব্যবসা করতে কিন্তু ধীরে ধীরে হয়ে উঠল শাসক আর আমরাই নিজেদের মাটিতে হয়ে উঠলাম বন্দি ।আমাদের চাষীদের তারা বাধ্য করল নীল চাষ করতে, আফিম চাষ করতে। ইংরেজরা জানত ভারতবাসীর একতা না ভাঙতে পারলে ভারত জয় করা যাবে না ।তাই তারা হিন্দু-মুসলমান, উচ্চবর্ণ নিম্নবর্ণ , সবার মধ্যে জাতি ধর্ম নিয়ে বিভেদ সৃষ্টি করতে শুরু করে। যেকোনো প্রতিবাদে দেশবাসীদের লাঠিচার্জ ,জেলে পাঠানো কিংবা নির্মমভাবে হত্যা করত। ইংরেজদের অত্যাচার শুধু শারীরিক ছিল না মানসিকও ছিল ।তারা আমাদের বিশ্বাস করিয়েছিল আমরা দুর্বল ,আমরা অযোগ্য, আমরা দাসত্ব করারই যোগ্য। ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগের সেই পাশবিক ,অমানবিক ঘটনা আজও আমাদের ক্ষুব্ধ করে তোলে। হাজার হাজার নিরস্ত্র সাধারণ মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সেই দিনটি ইতিহাসে রক্ত দিয়ে লেখা এক নিষ্ঠুর অধ্যায় ।
কিন্তু এত অত্যাচারের পরেও ভারতীয়দের আত্মা দেশপ্রেমে জেগে উঠেছিল। তাদের লাঠির জবাব আমরা দিয়েছিলাম কলমে, অস্ত্রে, কন্ঠে আর সাহসে । ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ ছিল সেই প্রথম গর্জন ,প্রথম প্রতিবাদ । মঙ্গল পান্ডের গুলির শব্দ কাঁপিয়ে দেয় ব্রিটিশ রাজত্বকে। ধীরে ধীরে জেগে উঠতে থাকে ভারতের সংগ্রামীরা। যেখানে মাত্র 18 বছর বয়সে নির্ভীক ক্ষুদিরাম হাসিমুখে ফাঁসির দড়ি গলায় নিয়ে সমস্ত ভারতবাসীকে শিখিয়েছিল দেশপ্রেম কাকে বলে ।আমরা ভুলে যেতে পারি না ভগৎ সিংকে যিনি মাত্র ২৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছিলেন শুধু দেশের স্বাধীনতার জন্য। যিনি বলেছিলেন আমি বন্দেমাতরম বলে মরতে পারলেই ধন্য । ভগৎ সিং এর সেই বাণী ইনকিলাব জিন্দাবাদ অর্থাৎ বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক আজও আমাদের মনে দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলে। আমাদের দেশে এমন বীর যোদ্ধাদের অভাব নেই যারা দেশের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন ।মহাত্মা গান্ধী ,নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, বালগঙ্গাধর তিলক ,বিপিনচন্দ্র পাল, লালা লাজপত রায়, সৈয়দ আহমেদ খান, সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেল এমন আরো অগণিত বিপ্লবী ভারতমাতার স্বাধীনতার জন্য শহীদ হয়েছেন। এছাড়া রানী লক্ষ্মীবাঈ, মাতঙ্গিনী হাজরা, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার যারা প্রমাণ করেছিলেন স্বাধীনতার যুদ্ধে নারীরাও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিজেদের অবদান রেখেছেন ।

মহাত্মা গান্ধীর নিরস্ত্র হাতে, শান্ত কণ্ঠে কিন্তু পাথরের মতো দৃঢ় মনোবল শাসকের চোখে চোখ রেখে বলেছিলেন "do or die" .. তার হাতে ছিল বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র "অহিংসা" ।গান্ধীজী অস্ত্রের বদলে বেছে নিয়েছিলেন সত্য, সাহস, অহিংসা আর সহনশীলতাকে । ডান্ডি অভিযান, অসহযোগ আন্দোলন ,ভারত ছাড়ো আন্দোলন এগুলো শুধু রাজনৈতিক পদক্ষেপ না, এই আন্দোলনগুলির মাধ্যমে গান্ধীজী ব্রিটিশদের নৈতিক ভিত্তিকেই নড়িয়ে দিয়েছিলেন । তার শান্ত প্রতিবাদে সারা পৃথিবী বুঝতে শুরু করে ভারত নিপীড়িত কিন্তু দুর্বল নয়। তবে যদি গান্ধীজি ছিলেন নদীর মত শান্ত তাহলে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন বজ্রের মতো জাগ্রত ।তিনি কোনদিনও আপোষ করেননি ।তার চোখে ছিল একটাই লক্ষ্য -"পূর্ণ স্বাধীনতা" । তিনি বলেছিলেন "তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব"। নেতাজির এই আহ্বান যেন বিদ্যুৎ হয়ে আঘাত করেছিল পরাধীনতার আকাশে। আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করে তিনি সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে। তার ডাকে জেগে উঠেছিল দেশপ্রেমিক যুবশক্তি। নেতাজী মনে করতেন" স্বাধীনতা ভিক্ষা করে নয়, ছিনিয়ে নিতে হয় "।গান্ধীজি ও নেতাজি দুজনের পথ আলাদা হলেও, কিন্তু লক্ষ্য ছিল একটাই -"স্বাধীন ভারত"।
 আর হাজারো বলিদান এর পর অবশেষে হল সেই দিন- ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট, ভারতবাসী দেখল স্বাধীনতার ভোর, ভারত মুক্তি পেল দাসত্য থেকে। কিন্তু স্বাধীনতার সেই আলো সঙ্গে নিয়ে এলো দেশভাগের অন্ধকার। লক্ষ লক্ষ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ল । স্বাধীনতা তো এলো কিন্তু একটা অমূল্য মূল্য দিয়ে । তারপরেও জাতি সেদিন বলতে পেরেছিল "ভারত আজ মুক্ত"
 তাই স্বাধীনতার গুরুত্ব আমাদেরকে মনে রাখতে হবে সব সময় ।স্বাধীনতা শুধু একটি উৎসব নয়, এটি একটি সংগ্রাম, একটি দায়িত্ব ,একটি চেতনা পূর্ণ জাগরণ, একটি প্রতিজ্ঞা যে আমরা এই স্বাধীনতাকে অপচয় করব না ।স্বাধীনতা মানে নিজেকে জিজ্ঞেস করা "আমি কি করছি দেশের জন্য?" কারণ দেশের প্রতি ভালোবাসা কেবল 15 ই আগস্ট বা ২৬ শে জানুয়ারি নয় ,এটা প্রতিনিয়ত প্রতিটি নিঃশ্বাসের সাথে বয়ে নিয়ে চলা এক বিনম্র দায়িত্ব। আজ সারা দেশ ত্রিবর্ণ পতাকায় মোড়া । স্কুল কলেজ সরকারি দপ্তর সব জায়গায় আজ জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মহোৎসব। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গায়ে জাতীয় পোশাক, হাতে তেরঙ্গা, মুখে দেশাত্মবোধক গান । নানা দেশাত্মবোধক নাটক, কবিতা, আবৃত্তি ,নৃত্য, গানের মাধ্যমে দেশের শহীদদের শ্রদ্ধা ও সম্মান জানানো হচ্ছে। আজ সমগ্র দেশ সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে এক হয়ে বলে "ভারত মাতা কি জয়"। 
আমরা এক নতুন ভারতের প্রজন্ম ।যে ভারত ভগৎ সিং এর রক্তে, নেতাজির বজ্র ধ্বনিতে আর গান্ধীজীর অহিংসার আদর্শে গড়ে উঠেছে। আজ আমাদের হাতে আছে সেই অমূল্য রত্ন "স্বাধীনতা" , যে স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি তা কোন দয়া নয় ,এই স্বাধীনতা এসেছে রক্ত দিয়ে, আগুনে পুড়ে, গর্জে ওঠা প্রাণের বদলে ।আজ আমরা মুক্ত ,মাথা উঁচু করে চলতে পারি ।এই স্বাধীনতা আমাদের কাছে একটা অঙ্গীকার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ।যে ভারতের স্বপ্ন দেখেছিলেন নেতাজি গান্ধীজী ক্ষুদিরাম আমরা যেন সেই স্বপ্নকে বাস্তব করি প্রতিদিনের কর্মে, কথায় ও সংকল্পে। আজকের তরুণ যেন হয় সত্যের সৈনিক, যেন তার হাতে থাকে দেশের দীপ্ত ভবিষ্যৎ ।স্বাধীনতা মানে শিখা ,যেটা নিভে গেলে অন্ধকার, স্বাধীনতা মানে উত্তরাধিকার যেটা আগলে রাখতে হয় প্রাণ দিয়ে। তো আসুন আজকে আমরা সবাই শপথ নেই ও অঙ্গীকারবদ্ধ হই যে আমরা আমাদের বীর শহীদদের প্রাণের বলিদান কে বিফলে যেতে দেব না। এই স্বাধীনতাকে আমরা প্রাণ দিয়ে হলেও রক্ষা করব, দেশের প্রতি সমস্ত দায়িত্ব সততার সাথে পালন করব ।এই দেশ, এই মাটি, এই পতাকার প্রতি আমরা চির কৃতজ্ঞ ও চির ঋণী হয়ে থাকবো।
 ভারত মাতা কি জয়
জয় হিন্দ

Comments