26th January Republic Day speech in bengali | ২৬ শে জানুয়ারি ২০২৩ | ভারতের ৭৪তম প্রজাতন্ত্র দিবস

২৬ শে জানুয়ারি মানেই প্রতিটি ভারতবর্ষের নাগরিকের কাছে একটি বিশেষ দিন । পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সার্বভৌম ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতবর্ষের প্রতিটি পাড়ায় পাড়ায়, স্কুল-কলেজ, অফিস আদালত সহ অগণিত স্থানে মহা আড়ম্বরের সাথে পালিত হয় ভারতের সাধারণতন্ত্র দিবস বা প্রজাতন্ত্র দিবস । যে সমস্ত জাতীয় দিনগুলোতে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি ভারতবাসী মন খুলে উদযাপন করে আজকের দিনটি সেই তালিকায় অন্যতম স্থান অধিকার করে রয়েছে। ভারতের সংবিধান ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন আর ভারতীয় সংবিধান হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় লিখিত সংবিধান । আর এই সংবিধানের দ্বারাই ভারত একটি গণতান্ত্রিক বা প্রজাতান্ত্রিক দেশ যেখানে জনগণ বা প্রজার ক্ষমতায় সর্বোপরি । অর্থাৎ ভারতের শাসন ব্যবস্থা জনগণের দ্বারা নির্ধারিত সদস্য মন্ডলীর দ্বারাই পরিচালিত হয়। সার্বভৌম  অর্থাৎ আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আমরাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব। বাইরের কোন দেশ ভারতের অভ্যন্তরীণ কোন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।  ধর্মনিরপেক্ষ অর্থাৎ ভারতের সংবিধান কোন ধর্মের প্রতি পক্ষপাত করবে না । সব ধর্মের লোকই নিজ নিজ ধর্ম বিনা বাধায় পালন করতে পারবে , এবং ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী প্রতিটি ভারতীয় নাগরিকের মৌলিক অধিকার সমান হবে। 

 ১৯৫০ সালের আজকের দিনে অর্থাৎ ২৬ শে জানুয়ারি ভারতবর্ষের সংবিধান কার্যকরী করা হয়েছিল । এবং সেইদিন থেকেই আজকের দিনটি প্রজাতন্ত্র দিবস হিসাবে পালিত হয়ে আসছে। ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট প্রায় ২০০ বছরের ইংলিশ শাসনের হাত থেকে স্বাধীনতা লাভ করে আমাদের দেশ ভারতবর্ষ  । শত সহস্র বীর বিপ্লবীদের আত্মত্যাগ ও রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ফসল ছিল আমাদের কাঙ্ক্ষিত এই স্বাধীনতা। আর ১৫ ই আগস্ট ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষে স্বাধীন হলেও দেশের প্রধান হিসেবে তখনো বহাল ছিলেন ষষ্ঠ জর্জ এবং লর্ড লুই মাউন্টব্যাটেন ছিলেন গভর্নর জেনারেল।
ক্ষমতা হস্তান্তর হলেও ভারতবর্ষের জন্য কোন স্থায়ী সংবিধান ছিল না। ১৯৩৫ সালের ঔপনিবেশিক ভারত শাসন আইনের কিছু রদবদল করেই দেশ শাসনের কাজ চলছিল।
১৯৪৭ সালের ২৮শে আগস্ট একটি স্থায়ী সংবিধান রচনার জন্য ড্রাফটিং কমিটির রচনা করা হয়। ডক্টর ভিমরাও রাম জি, আম্বেদকর এর নেতৃত্বে ৪ঠা নভেম্বর ১৯৪৭ সালে কমিটি একটি খসড়া সংবিধান প্রস্তুত করে এবং গণপরিষদে জমা দেয়। দেশের প্রতিটি শ্রেণীর প্রতিটি ধর্মের এবং প্রতিটি বর্ণের মানুষ যেন সমান অধিকার এবং স্বাধীনতা প্রাপ্ত করতে পারে , যাতে জনগনই দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হয় সেজন্য প্রায় ২ বছর ১১ মাস ১৮ দিনব্যাপী গণপরিষদে এই খসড়া সংবিধান আলোচনার জন্য ১৬৬ বার অধিবেশন ডাকে । এই সমস্ত অধিবেশনে সমাজের সর্বস্তরের প্রতিনিধির পাশাপাশি জনসাধারণেরও প্রবেশাধিকার ছিল আর এর ফলস্বরূপ ১৯৪৯ সালের ২৬ শে জানুয়ারি বিশ্বের সর্ববৃহৎ লিখিত সংবিধান গৃহীত হয় । এবং ঠিক করা হয় এই দিনটিকেই ভারতের প্রজতন্ত্র দিন হিসেবে ধার্য করা হবে। বছরে ৩৬৫ দিন থাকতেও ২৬ শে জানুয়ারি দিনটিতে ভারতের সংবিধান কার্যকরী করার দিন অর্থাৎ প্রজাতন্ত্র দিবস পালন করার পেছনেও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। আর এর বীজ লুকিয়ে রয়েছে ১৯৩০ সালের ২৬ শে জানুয়ারি ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের লাহোর অধিবেশনে যেখানে সেদিন ঠিক করা হয়েছিল সেদিন থেকে ২৬ শে জানুয়ারি দিনটিকে ভারতবর্ষের পূর্ণ স্বরাজ দিবস বা স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করা হবে। কিন্তু ১৯৪৭ সালে মাউন্টব্যাটেন যেদিন ক্ষমতা হস্তান্তর করলেন সেটি ২৬ শে জানুয়ারি ছিলনা সেটি ছিল ১৫ই আগস্ট। তাই ঠিক করা হয় ভারতীয় সংবিধান কার্যকরের করার দিনটি ২৬ শে জানুয়ারি সম গ্র ভারতবর্ষে উদযাপন করা হবে। ১৯৫০ সালের ২৪ শে জানুয়ারি গণপরিষদের ৩০৪ জন সদস্য সংবিধানের দুটি হাতে লেখা কপিতে স্বাক্ষর করেন এবং ২৬ শে জানুয়ারি বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের সংবিধানকে কার্যকরী করা হয়। যে সংবিধান দেশের প্রতিটি নাগরিককে দেয় তাদের সাম্য-মৈত্রী এবং স্বাধীনতার অধিকার । নিজস্ব মত প্রকাশের অধিকার । অবাধ ধর্মাচরণের অধিকারসহ সমস্ত মৌলিক অধিকারকে যেখানে প্রজা অর্থাৎ জনগণই শেষ কথা । যেখানে বংশ পরম্পরায় নয়, জনগণের দ্বারাই নির্বাচিত হবে জনগণের সর্বোচ্চ প্রতিনিধি।
বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান কুচকাওয়াজের মাধ্যমে দেশের সংস্কৃতি ও ইতিহাসের ছবি ভেসে ওঠে সমগ্র দেশের বিভিন্ন প্রান্তে । সাধারণতন্ত্র দিবস উদযাপনের প্রধান কর্মসূচি পালিত হয় ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লিতে। এদিন দিল্লির রাজপথে আরম্বড়পূর্ণ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয় । ভারতবর্ষের সম্মানীয় রাষ্ট্রপতির এদিন জাতির উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দেন এবং ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন । দেশ-বিদেশের বহু সম্মানীয় অতিথিবৃন্দ এ দিন উপস্থিত থাকেন। এই দিন ভারতবর্ষের অমর বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো হয়।
ভারতীয় সেনার  তিন বাহিনী বিটিং রিট্রিট প্রদর্শন করে যা অন্যতম নজর কারা । এর পাশাপাশি ভারতবর্ষের প্রতিটি জনগণ এই দিন অঙ্গীকারবদ্ধ হয় সৌভ্রাতৃত্বের এবং জাতীয়তাবাদের আবেগে।  ভারতবর্ষ একদিন বিশ্ব মানচিত্রে সেরার শিরোপা আরোহণ করবেই ।
 জয় হিন্দ ,বন্দেমাতরম , ভারত মাতা কি জয়।


Comments