ভারতের ৭৪ তম স্বাধীনতা দিবসের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য || Happy Independence Day speech 2020

 



আজ ১৫ই আগস্ট,ভারতবর্ষেরস্বাধীনতা দিবস।

প্রতিটিভারতবাসীর কাছে আজকের দিনটির গুরুত্ব কতটা তা আমরা সবাই জানি।

১৫ ই আগস্ট দিনটি ভারতমাতার হৃদয়ের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে,ও ভবিষ্যতেও থাকবে। কারণ ১৯৪৭ সালের ১৫ ই  আগষ্ট,ভারতবর্ষের আকাশে উদিত হয়েছিল স্বাধীনতার সূর্য।আজকের দিনেই ভারতবর্ষ অত্যাচারী ব্রিটিশ রাজশক্তির হাত থেকে মুক্তি লাভ করেছিল।ওই ঐতিহাসিক ঘটনাকে স্মরণীয়করে রাখার জন্য প্রতিবছর নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ,স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মরণ-মননের মধ্য দিয়ে,স্বাধীনতার জন্য আত্মোৎসর্গ করেছিলেন যে  শহীদেরা সেই বির শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে প্রতিবছর ১৫ ই আগস্ট মহা সমারোহে ভারতবর্ষ জুড়ে আমাদের স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয়।

পৃথিবীব্যাপী করোনা ভাইরাসের সংকটময় পরিস্থিতিতে প্রতিবছরের ন্যায় এবছর হয়তো আমরা স্কুল,কলেজ,বিভিন্ন প্রশাসনিক স্থানে সবাই একসাথে মিলিত হয়ে মহা আরম্ভরের সাথে আমাদের ৭৪তম স্বাধীনতা দিবস পালন করতে পারছিনা। তাই আজকের দিনে আমরা শুধু পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়েই আসুন সবাই অঙ্গীকারবদ্ধ হই যে করোনা মহামারি রুখতে সবাই একসাথে লড়াই করবো। বর্তমানের পরিস্থিতিতে সবাই সবার পাশে দাঁড়াবো। আমাদের মনে রাখতে হবে যে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে এটাও মানবজাতির স্বাধীনতার লড়াই। আর এই লড়াইয়ে জয় মানবজাতিরই হবে।



  ভারতবর্ষের এই স্বাধীনতা স্বল্প সময়ের কোনো সহজলভ্য বিষয় ছিলো না। এই স্বাধীনতার ভিত্তি ছিল আমাদের মুক্তি যোদ্ধাদের সাহসী ও রক্তময় সংগ্রাম। আমরা যদি ইতিহাস দেখি তবে আমরা দেখতে পাবো ১৭৫৭ সালে পলাশীরপ্রান্তরে নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির যে যুদ্ধ হয়েছিল ব্রিটিশদের সেই যুদ্ধ জয়ই ভারতে ব্রিটিশ রাজত্বের সূচনাবিন্দু। অর্থাৎ একথা স্পষ্ট যে ১৭৫৭ সালেই ভারতের স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। ২০০ বছর ব্রিটিশদের দ্বারা ভারতবাসীরা নিপীড়িত,শোষিত,অত্যাচারিত,বঞ্চিত হয়েছে।



কিন্তু ভারতবাসীর বীর সন্তানেরা কোনোদিনও এই পরাধীনতা মেনে নেননি। দেশপ্রেমের আগুন তাদের মনে শিহরিত হতো । আর এই দেশপ্রেমের চরম দৃষ্টান্ত রেখে গিয়েছিলেন মাত্র ১৮ বছরের ক্ষুদিরাম বসু । যিনি হাসতে হাসতে দেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন,যার অদম্য সাহস ও দেশপ্রেম আজও দেশবাসীকে অনুপ্রাণিত করে ।চির আকাঙ্খিত স্বাধীনতার জন্য ভারতবর্ষের বুকে যে আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল সেই আন্দোলন মূলত দুটি বিপরীত ধারায় সম্পূর্ণ হয়েছিল , যথা নরমপন্থী আন্দোলন ও  চরমপন্থী আন্দোলন।

নরমপন্থী আন্দোলনের নেতৃত্ব হিসেবে ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ছিলেন যারা তাদের মধ্যে উল্লেখ্যোগ্য ছিলেন গোপালকৃষ্ণ গোখলে ,ফিরোজ শাহ,উমেশ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, সুরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়,দাদাভাই নৌরজি এবং অন্যতম নেতা মহাত্মা গান্ধী।   তেমনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক চরমপন্থী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যারা তাদেরমধ্যেউল্লেখযোগ্য ছিলেন বালগঙ্গাধর তিলক, লাল লাজপত রায়, বিপিন চন্দ্র পাল,ভগৎ সিং ,সুভাষ চন্দ্র বসু প্রমুখ। একদিকে যেমন শুরু হয়েছিল মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ডান্ডি অভিযান, আইন অমান্য আন্দোলন,ভারত ছাড়ো আন্দোলন তেমনি অন্যদিকে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ বাহিনীর প্রবল আক্রমণ সংগঠিত হয়েছিল।

আজাদ হিন্দ ফৌজের নির্ভিক আন্দোলন ও কার্যকলাপ দীর্ঘ ২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসনের ভিতকে নাড়িয়ে রেখে দিয়েছিলো ,যা থেকে আমাদের স্বাধীনতার যাত্রা শুরু হয়েছিলো।

                     ১৯৪৬ সালের পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাবে ব্রিটেনের রাজকোষ প্রায় শুন্য হয়ে পড়েছিল। সেইসময়ে ব্রিটেনের সরকার বুঝতে পেরেছিলো ভারতের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতাকে সামাল দেওয়ার ক্ষমতা বা অর্থবল ব্রিটিশ সেনাবাহিনী হারিয়ে ফেলেছে। তারা ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটিয়ে ১৯৪৮ সালের ৩০ শে জুনের মধ্যেই ভারতের শাসন ক্ষমতা হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত নেন। স্বাধীনতা ঘোষণার সময় যত এগিয়ে আসতে থাকে পাঞ্জাব ও বাংলা প্রদেশে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও তত বৃদ্ধি পায়। দাঙ্গা রোধে ব্রিটিশ বাহিনীর অক্ষমতার কথা মাথায় রেখে ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় লুইস মাউন্টব্যাটেন ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট দিনটিকে ক্ষমতা হস্তান্তরের দিন হিসেবে নির্ধারিত করে। ১৯৪৭ সালের জুন মাসে জওহরলাল নেহেরু, মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ ,বি আর আম্বেদকর প্রমুখ জাতীয়তাবাদী নেতৃত্ববৃন্দ ধর্মের ভিত্তিতে ভারত বিভাগের প্রস্তাব মেনে নেন। সুতরাং ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট জন্ম হলো পাকিস্তান রাষ্ট্রের আর ১৫ ই আগস্ট জন্ম হলো ভারতবর্ষের। ব্রিটিশ সরকার সমস্ত ক্ষমতা ভারতীয়দের হস্তান্তরিত করার ফলে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে। এবং ১৫ ই আগষ্ট থেকে পাকিস্তান ও ভারত এই দুটি পৃথক ও সার্বভৌম রাষ্ট্র বিশ্ব মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ করে। 


  দেশ স্বাধীন হলো কিন্তু বুকের মধ্যে রয়ে গেল দেশ ভাগের তীব্র যন্ত্রণা। ১৫ ই আগস্ট দিনটি আমাদের মনে করায় একদিকে অগণিত বীর শহীদদের রক্তে রাঙানো স্বাধীনতা, তেমনি অন্য দিকে দেশভাগের ফলে স্বজন হারানোর যন্ত্রণা। একদিকে হারানোর গভীর কষ্ট আর অন্য দিকে প্রাপ্তির অপার আনন্দ।

সর্বস্ব হারিয়ে যে স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি স্বাধীন ভারতের একজন সুশিক্ষিত দায়িত্বশীল নাগরিক হওয়ার জন্য আমাদের কর্তব্য এই স্বাধীনতা রক্ষার।প্রসঙ্গত বলতে হয় যে আপনারা সকলেই জানেন অতি সম্প্রতি লাদাখ সীমান্তে ভারত চীনের লড়াইয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী অসাধারণ পরাক্রমের পরিচয় দিয়েছে। আপনার ও আমার মতো সাধারণ মানুষ হয়তো সীমান্তে গিয়ে শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারবো না,কিন্তু ভারতীয় সেনাবাহিনী,নৌবাহিনী ,বায়ুসেনা যেভাবে শত্রুদের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করছে তার জন্য তাদের সন্মান ও শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা ওদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পারি।ওদের আশ্বাস দিতে পারি যে সারা ভারতবাসী ওদের সাথে আছে, আমরা ওদের জন্য গর্বিত। তাহলেই হয়তো আমাদের স্বাধীনতা প্রকৃত অর্থে সার্থক হবে।


         আজ আমরা আমাদের স্বাধীনতার ৭৪তম বর্ষে পদার্পণ করলাম কিন্তু কতটা স্বাধীন হতে পেরেছি আমরা ? হয়তো ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীন হয়েছি আমরা। কিন্তু এখনো আমাদের দেশকে গ্রাস করে রেখেছে ধর্মীয় ভেদাভেদ,আজও ধর্মের জন্য মানুষকে খুন হতে হয়। আজও দারিদ্রতা,বেকারত্ব আমাদের সমাজকে ঘিরে রেখেছে। আজও অনাহারে শত শত মানুষের মৃত্যু ঘটছে। আজও বেকারত্বের জ্বালায় যুবকেরা আত্মহত্যা করছে। আজও কৃষকেরা তাদের ফসলের প্রকৃত দাম না পেয়ে জীবন যুদ্ধে হেরে যায়। বর্তমান ভারতের পরিস্থিতি দেখে "সারে জাহা সে আচ্ছা,হিন্দুস্তা হামারা" কথাটি কতটা ঠিক তা নিয়ে আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে।আজও আমরা সবাই স্বাধীন হলেও অনেক জায়গায় নারীরা আজও পরাধীন। তারা তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী কাজের স্বাধীনতা পায়না।পায়না প্রাপ্য সন্মান। পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে।স্বাধীনতা দিতে হবে জাতি ,ধৰ্ম ,বর্ণ নির্বিশেষে সকলকেই। তবেই ভারতবর্ষ প্রকৃত অর্থে স্বাধীন হয়ে উঠবে।আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের রক্তক্ষরণের মাধ্যমেযে স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি সে স্বাধীনতাকে আমরা ভূলুণ্ঠিত হতে দেবো না। আমাদের মধ্যে থাকবেনা কোনো অসহিষ্ণুতা ,জাতপাতের ভেদাভেদ,কুসংস্কার। সমস্ত সামাজিক ব্যাধিকে দূর করে আমরা ভারতবাসী এক দেশ এক জাতি হয়ে অবশ্যই এগিয়ে আসবো,অবশ্যই জয়ী হবো। অবশ্যই সারা বিশ্বের কাছে গর্বের হয়ে উঠবে আমাদের দেশ। তাই সমস্ত রকম সঙ্কীর্ণতাকে দূর করে  যদি আমরা এক হয়ে উঠতে পারি তবেই ভারত আবার জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে।


         জয় হিন্দ, বন্দে মাতরম , ভারতমাতা কি জয়।


Video speech on Independence Day 2020 in Bengali-স্বাধীনতা দিবসের বক্তব্য ২০২০


ভারতের জাতীয় পতাকার বিবর্তনের ইতিহাস


Comments

Post a Comment