Teachers' Day Speech In Bengali 2020 || শিক্ষক দিবসের বক্তৃতা। 5th September short Speech in Bengali
গুরু বা শিক্ষক শব্দটি মুখে আনতেই আমাদের সবার মনে এক সম্মান বোধ জেগে ওঠে । গুরু বা শিক্ষক ই পারেন একজন মানুষকে আদর্শবান করে তুলতে এবং জীবনের সঠিক পথে চলার সঠিক পরামর্শ দিতে ।
আমাদের জীবনে একজন গুরু বা শিক্ষকের গুরুত্ব কতটা তা আমরা আমাদের পুরাণ কাহিনী মহাভারত থেকেও বুঝতে পারি । মহাভারতে আমরা দেখতে পাই গুরু দ্রোনাচার্য কৌরব এবং পাণ্ডবদের শুধু শিক্ষা দানই করেন নি, তিনি তাদের প্রত্যেকের সুপ্ত প্রতিভাকে উপলব্ধি করেন এবং তাদের প্রত্যেককেই সেই প্রতিভার ভিত্তিতে শিক্ষাদান করে আলাদা আলাদা ক্ষেত্রে পারদর্শী করে তোলেন। নাহলে অর্জুনকে গদার শিক্ষা এবং ভীমকে ধনুর্বিদ্যা সেখালে হয়তো অর্জুন কোনদিনও শ্রেষ্ঠ ধনুকধারী এবং ভীম শ্রেষ্ঠ গদাধারী হতে পারতেন না।তেমনি অন্যদিকে একজন আদর্শ শিষ্যেরও যে তার শিক্ষকের প্রতি নিষ্ঠা, ভক্তি, শ্রদ্ধা এবং কর্তব্য থাকা উচিত তা আমরা একলব্যের গুরু দ্রোনাচার্যের প্রতি ভক্তি থেকে শিখতে পারি ।
শিক্ষক হলেন সমাজ তথা মানুষ তৈরীর কারিগর। একজন মা সন্তানকে জন্ম দেয়, কিন্তু সত্যিকারের একজন শিক্ষক সেই জীবনকে আকার ও আকৃতি দেন , কারণ শিক্ষকদের ছাড়া জীবন অর্থহীন । একজন শিক্ষকই শিশুদের মনে ন্যায় নীতি এবং মূল্যবোধ সৃষ্টি করেন ।শিক্ষকদের ছাড়া দেশের উন্নতি সাধন সম্ভব নয় ।
আজ 5 ই সেপ্টেম্বর, শিক্ষক দিবস আজকের দিনটি প্রতিটি ছাত্র ছাত্রীর কাছে আরাধনার দিন। না কোন দেব দেবীর আরাধনা না, আজকে প্রত্যেক ছাত্রছাত্রী আরাধনা করেন তাদের সম্মানীয় গুরু বা শিক্ষকদের। আজকের দিনে ভারতবর্ষের প্রতিটি স্কুল ,কলেজ, টিউশন ,সহ সমস্ত শিক্ষার আলোয় গুলো সুসজ্জিত হয়ে ওঠে তাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সন্মান প্রদর্শনের জন্য। আজকের এই শিক্ষক দিবসে আমার প্রতিটি শিক্ষক এবং শিক্ষিকাদের জানাই আন্তরিক সম্মান এবং ভালোবাসা। যেই মহান ব্যক্তির জন্মদিন আজকে এই শিক্ষক দিবস পালন করা হয় তাকে নিয়ে দু চার কথা না বললেই নয় । হ্যাঁ তিনি হলেন ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ ।
1888 সালের আজকের দিনেই তামিলনাড়ুর এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ। ছাত্র হিসেবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। জীবনের কোনো পরীক্ষাতেই তিনি প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় হননি। ১৯০৫ সালে তিনি মাদ্রাজ খ্রিস্টান কলেজ থেকে দর্শনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। প্রথম জীবনে তিনি মাইসরো বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন। এরপর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ,বেনারস বিশ্ববিদ্যালয় এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন। 1931 সালে ইংরেজরা তাকে নাইটহুড উপাধিতে সম্মানিত করেন। তিনি ছিলেন একাধারে একজন রাজনীতিবিদ,বিচক্ষণ দার্শনিক এবং সর্বোপরি একজন আদর্শ শিক্ষক । তিনি 1952 থেকে 1962 দশ বছর স্বাধীন ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি এবং 1962 থেকে 1967 পাঁচ বছর ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার বহন করেন ।
এছাড়াও নানা দায়িত্বভার তিনি গ্রহণ করলেও সর্বোপরি তিনি ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক। তার জীবনের মূল উদ্দেশ্যই ছিল শিক্ষার উন্নতি সাধন। 1954 সালে ভারতের সর্বোচ্চ সম্মান ভারতরত্নে তিনি ভূষিত হন । তিনি বিশ্বাস করতেন যে Teachers should be the best mind in the country .
রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর 1962 সালে তার কিছু গুণমুগ্ধ ছাত্র ও বন্ধুরা জন্মদিন পালন করতে চাইলে তিনি বলেন জন্মদিনের পরিবর্তে 5 সেপ্টেম্বর যদি শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা হয় তবে তিনি বেশি খুশি হবেন। এই পরিপেক্ষিতে 1962 সালের পর থেকে 5 ই সেপ্টেম্বর দিনটি ভারতবর্ষে শিক্ষক দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়ে চলেছে। শিক্ষক আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শিক্ষক ছাড়া যোগ্য সমাজ এবং উজ্জ্বল জীবন কল্পনাতীত।
বর্তমানে করোনাভাইরাস এর প্রাক্কালে স্কুল-কলেজসহ সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। তাই কলেজসহ দেশের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পঠন-পাঠন চলছে অনলাইন পদ্ধতিতে । অনলাইনে ক্লাস করানোটা নবপ্রজন্মের শিক্ষকদের কাছে যতটা সহজ বিষয় আমাদের প্রবীণ শিক্ষক শিক্ষিকাদের কাছে ততটা সহজ বিষয় নয়। কারণ আমাদের সিনিয়র শিক্ষক শিক্ষিকারা ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ,ইউটিউব সহ এই সমস্ত সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট গুলোর প্রতি ততটা পারদর্শী নন। তবুও উনারা ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে যতটা সম্ভব চেষ্টা করছেন অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার। কিন্তু এটা খুবই দুঃখজনক যে কিছু কিছু ছাত্রছাত্রীরা উনাদের এই প্রয়াসকে প্রাপ্যসম্মান দিচ্ছেন না। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং বিভিন্ন সাইট গুলোতে বিভিন্ন ছাত্রছাত্রীরা প্রবীণ শিক্ষক শিক্ষিকাদের এই অনলাইন ক্লাস নেওয়া নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করছে, যা মোটেও কাম্য নয়। অনলাইন ক্লাসের কিছু খারাপ দিক থাকলেও অনেক ভাল দিকও রয়েছে,যেমন শিক্ষক-ছাত্র সবাই technology-এর সাথে পরিচিত হচ্ছে।যে সমস্ত ছাত্রছাত্রীরা যাতায়াতের অসুবিধার জন্য বা যারা বাড়িতে কাজের জন্য স্কুল-কলেজ যেতে পারতো না,তারা অনায়াসেই বাড়িতে বসেই technology-এর মাধ্যমে তাদের শিক্ষকদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে।
যেকোনো সফল মানুষের পিছনে শিক্ষকের ভূমিকা অপরিসীম।সে শিক্ষক যে শুধু পড়াশোনার ক্ষেত্রে থাকবেন তাই নয়,তিনি থাকতে পারেন জীবনের যেকোনো ক্ষেত্রে।তিনি ব্যর্থতায় পাশে দাড়িয়ে উৎসাহ দেবেন,সাফল্যে নতুন লক্ষ্য স্থির করে দেবেন,সর্বোপরি তিনি একটি ছাত্রকে ভালো মানুষ হতে শেখাবেন।তাই একজন শিক্ষকই কেবলমাত্র Friend,Philosopher এবং Guide এই তিনটি ভূমিকাই পালন করতে পারেন।পরিশেষে আমার সমস্ত শিক্ষক শিক্ষিকাদের উদ্দেশে একটা কথাই বলতে চাই যে ক্লাসে 5 মিনিট দেরি হলে শাস্তি দেওয়ার মানুষও আপনি এবং আমাকে সময়ের গুরুত্ব শেখানোর মানুষও আপনি।আজকে শিক্ষক দিবসে আমার সকল শিক্ষক শিক্ষিকাদের জানাই আন্তরিক সম্মান ও শ্রদ্ধা।
ধন্যবাদ
Comments
Post a Comment